এক কারখানায় ৩ লাখ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বসুন্ধরা গ্রুপের
তিন লাখ শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করবেন, এমন একটি কারখানা গড়ে তুলবে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন একটি কারখানা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। আর এটি হলে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্প গ্রুপে পরিণত হবে বসুন্ধরা গ্রুপ। আর একক কারখানা হিসেবে কর্মসংস্থান বিবেচনায় প্রস্তাবিত কারখানাটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানা।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রায় ৩০টি ফ্যাক্টরি রয়েছে। এছাড়া আবাসন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে গ্রুপটি। ইতিমধ্যে গ্রুপটি অর্ধলাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। গতকাল উদ্বোধন হওয়া বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে এক হাজার মানুষের। আরও তিন লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলে বসুন্ধরা গ্রুপ কেবল দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী গ্রুপই হবে না, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাতারে উঠে আসবে।
গতকাল কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সোবহান ভাইকে আমি প্রস্তাব করেছি যে, আপনি এমন কিছু ঘোষণা দেন যে, এমন একটি কারখানা করবেন, যেখানে তিন লাখ মানুষ কাজ করবে। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আমার জায়গা আছে। কথা দিলাম, সেখানে আমি এমন এক কারখানা করব, যেখানে তিন লাখ মানুষ কাজ করবে।’
পরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এ প্রসঙ্গে বলেন, একটু আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, আপনি এমন একটা শিল্প করেন, যেখানে তিন লাখ শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করবে। আমি তাকে আশ্বাস দিয়েছি, ইনশাল্লাহ আপনিই সেই কারখানার উদ্বোধন করবেন। তবে কোন ধরনের কারখানা গড়ে তোলা হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান।
বর্তমান সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এ জন্যই ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারের খালি পদগুলোতেও দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নেও গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, ধন্য যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব সবাই আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্য কিন্তু আমাকে নয়, প্রতিটা লোক জানে আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চেষ্টা করছি। এ দেশের অর্থনীতি ভালো করতে চেষ্টা করছি। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হচ্ছে। আজকের শিশুরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। আমি আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হলে ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো জাদুঘর হবে। সেই সঙ্গে সব মাধ্যমের শিশুরা যাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।
ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্বে এককভাবে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে ২২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আর ১৩ লাখ ৮২ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে চীনের আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম। বিশ্বের শীর্ষ ১০ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানের এ তালিকায় রয়েছে চীনের পোস্ট গ্রুপ, স্টেট গ্রিড, তাইওয়ানের ফক্সকন, জার্মানির ভক্সওয়াগন, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামাজন, চীনের সিনোপেক গ্রুপ, যুক্তরাষ্ট্রের কমপাস গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিস। এর মধ্যে ১০ নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসে কর্মরতদের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮০২ জন।
এদিকে ভারতের বিশ্বখ্যাত বড় শিল্প গ্রুপগুলোর কোনোটিই মোট তিন লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে রিলায়েন্স, যাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৯। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নিলে ভারতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, যাদের কর্মীসংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭২। আর ভারতের টাটা গ্রুপের কর্মীসংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৫৮ জন।
Source: deshrupantor.com